রাজধানীতে বিয়ের আসরে বখাটের হাতে কনের বাবা নিহত হয়েছেন। বখাটেদের উৎপাত কেবল রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েই চলেছে। তাই রিফাত শরীফ হত্যাকা- ছিল বখাটে ছেলেদের প্রকাশ্য হত্যাযজ্ঞ। দেখা যাচ্ছে একশ্রেণির তরুণ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য হত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করতে পিছপা হচ্ছে না। তাদের এই সাহসের পেছনে মূল কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এ ধরনের যত হত্যাকা- ঘটেছে তার ক্ষুদ্র একটি অংশে অপরাধী শাস্তি ভোগ করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত শনাক্ত হয়ে থাকে এবং গ্রেপ্তার হয়, বিচারিক প্রক্রিয়াও শুরু হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রায় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। নি¤œ আদালতের রায় হলেও উচ্চ আদালতে তা টেকানো সম্ভব হয় না। এর মূল কারণ পুলিশের অদক্ষতা ও অতিরিক্ত কাজের চাপ, আদালতে ফৌজদারি মামলার দীর্ঘজট এবং এর ফলে যে দীর্ঘসূত্রতা হয় তাতে সাক্ষীরা ক্রমে দায়িত্ব পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এর সঙ্গে নিশ্চয়ই অপরাধী পক্ষের হুমকি ও প্রলোভন এবং পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশের ভূমিকা রয়েছে। এটাই বাংলাদেশের আদালত ও থানার কার্যক্রমের বাস্তব চিত্র। এর ভেতর থেকে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া এবং নিরপরাধ মানুষকে রক্ষা করা একটি দুরূহ কাজ।
নিশ্চয়ই বখাটে ছেলের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে পরিবার এই মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। আর ছেলেটি তাৎক্ষণিক প্রতিহিংসার বশে হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে। এর পেছনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক বাস্তবতার নেতিবাচক দিকও ফুটে ওঠে। আর তাতে কোনোরকম নীতিবোধ শেখায়নি বা মানবিক গুণাবলি অর্জনের সুযোগ করে দেয়নি। আবার সে যে সমাজে বাস করে সেখানে মূল্যবোধচর্চা এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালতসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় নয়ন ও সজীব আহমেদ রকির মতো তরুণরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চরম শাস্তি দিচ্ছে। এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশের চিত্র হতে পারে না। আমরা এখনো আইনের শাসন থেকে অনেক দূরে আছি। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এসব অপরাধীর দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সবার জন্য আইনের শাসনকে নিশ্চিত করে তুলতে হবে।